নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ করোনা নাড়িয়ে দিয়েছে বরিশালের স্বাস্থ্য খাত। গত এক সপ্তাহে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। গত ৭ দিনে বরিশাল জেলায় ১৫৯ জন করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে এবং মৃত্যু হয়েছে ২ জনের। বর্তমানে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (শেবাচিম) চিকিৎসাধীন আছে ৯০ জন করোনা আক্রান্ত রোগী। আর আইসিইউ বেডের ১২টিতেই রোগী ভর্তি থাকায় অন্তত ২৫ জন রোগী আইসিইউতে বেড পাওয়ার অপেক্ষায় আছেন। গত বছর করোনা শুরু হওয়ার পর শেবাচিম হাসপাতালে নতুন ১৮টি আইসিইউ বেড সংযোযিত হলে মোট বেডের সংখ্যা ২২ এ দাড়ায়। কিন্তু তার মধ্যে বর্তমানে বিকল রয়েছে ১০টি। বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. বাসুদেব কুমার জানান, প্রতিদিন যেভাবে করোনা আক্রান্তের হার বাড়ছে তাতে পরিস্থিতি সামাল দেয়া কঠিন হবে। সূত্রমতে, গত বছরের মার্চ মাসে দেশে প্রথম করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হওয়ার পর বরিশালে স্বাস্থ্যসেবা যে দুর্বল অবস্থায় ছিল বর্তমানে পরিস্থিতি তার চেয়েও খারাপ। এখনকার পরিস্থিতিতে চিকিৎসকরা হয়ে পড়ছেন অসহায়। বিশেষ করে গুরুতর রোগীকে আইসিইউ বেড দিতে পারছেন না তারা। অথচ করোনাভাইরাসের সংক্রমণে সংকটাপন্ন রোগীদের ভেন্টিলেটরের মাধ্যমে কৃত্রিম শ্বাসপ্রশ্বাস চালু রাখার জন্য আইসিইউ প্রয়োজন হয়। গত বছরের মার্চে দেশে করোনা ধরা পড়ার পর বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চালু করা হয় পৃথক করোনা ওয়ার্ড। তবে চিকিৎসক আর চিকিৎসা সরঞ্জামের সংকটে এটি নানা সমস্যার মুখে পড়ে। শেবাচিমের পক্ষ থেকে বারবার ঢাকায় চিঠি দেওয়া হলেও সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। এখানে করোনা ওয়ার্ড ও হাসপাতাল মিলিয়ে যে দুটি আইসিইউ ওয়ার্ড রয়েছে সেগুলো পরিচালনার জন্যও কোনো আইসিইউ স্পেশালিস্ট নেই। এমনকি এতবড় একটি হাসপাতালে নেই অধ্যাপক পদমর্যাদার কোনো চিকিৎসক। করোনা ওয়ার্ড সূত্রে জানা গেছে, ডা. নাজমুল নামে একজন অ্যানেস্থেশিয়ার চিকিৎসক সামলাচ্ছেন আইসিইউ। নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে দায়িত্ব পালন প্রশ্নে তার অভিজ্ঞতা শুধুই ৭ দিনের একটি প্রশিক্ষণ। তিনি আবার কয়েকজন নার্সকে নিয়েছেন শিখিয়ে পড়িয়ে। তারাই দেখভাল করেন আইসিইউতে থাকা রোগীদের। করোনা সংক্রমনের প্রথমদিকে এখানে প্রেষণে ৪০ জন ডাক্তার নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে ৩২ জন মেডিকেল কলেজের এবং ৮ জন বিভিন্ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের। পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসার আগেই তারা যে যার মতো লবিং-তদবির করে ফিরে গেছেন পূর্বের কর্মস্থলে। ফলে চলমান দ্বিতীয় ওয়েভে হাসপাতালে আসতে থাকা রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া প্রশ্নে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। শেবাচিম হাসপাতালের (ভারপ্রাপ্ত) পরিচালক ডা. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ২২টি ন্যাজাল ক্যানুলার মধ্যে ১০টি বিকল। এগুলো মেরামত করার জন্য ঢাকায় চিঠি দেওয়া হয়েছে। অন্য সমস্যাগুলো সমাধানে ঢাকার সহযোগিতা চাওয়ার পাশাপাশি স্থানীয় পর্যায়েও চেষ্টা চলছে। সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে এখানে কোনো পূর্ণাঙ্গ পরিচালক নেই। ভারপ্রাপ্ত হিসাবে আমার ক্ষমতা সীমিত। তবু সব সমস্যা সমাধানে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. বাসুদেব কুমার জানান, খুবই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে বরিশাল। বর্তমানে বরিশালে শনাক্তের হার প্রায় ২৪ ভাগ। প্রতিদিনই বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। এভাবে চলতে থাকলে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া মুশকিল হয়ে পড়বে।’
Leave a Reply